আট নভেম্বর, ১৯৮৭, কলকাতা!
ইডেন গার্ডেনে বিশ্বমঞ্চের ফাইনালে মুখোমুখি চিরপ্রতিদ্বন্দী ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া! প্রথমবারের মতো শিরোপার হাতছানি দুই দলের কাছে! টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা অজিরা ডেভিড বুনের ৭৫ এবং শেষদিকে মাইক ভেলেটার ৩১ বলে ৪৫ রানের উপর ভর করে ২৫৩ রানের একটা শক্তপোক্ত অবস্থানে পৌঁছে!
২৫৪ রানের লক্ষমাত্রায় ব্যাটিং করতে নেমে প্রথম বলেই ওপেনার টিম রবিনসন অজি পেসার ম্যাকডারমটের বলে এলবিডব্লিউর শিকার হলে শুরুতেই চাপে পরে ইংলিশরা! প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিয়ে ব্যাট চালাতে থাকেন গ্রাহাম গুচ ও বিল আথে! তাদের ৬৫ রানের জুটি ভেঙে যায় ৩৫ রানে গুচ আউট হয়ে গেলে। ক্রিজে আসেন মাইক গ্যাটিং! আথে ও গ্যাটিং দারুন জবাব দিতে থাকেন। পরবর্তী তের ওভারে তারা তোলেন ৬৯ রান। ইংল্যান্ডের রানসংখ্যা তখন ১৩৫-২! ক্রিকেটমহল থেকে শুরু করে হয়তো অজি ড্রেসিংরুমও পাচ্ছে পরাজয়ের পূর্বাভাস! এমন সময় বোলিংয়ে আসলেন অজি দলপতি! ব্রেকথ্রুর আসায় তার বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনে ভরসা রাখলেন তিনি। অপরদিকে তখনকার স্পিন বোলিংয়ের বিপক্ষে অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান গ্যাটিং ক্রিজে!
ওই ম্যাচে নিজের প্রথম বল করতে আসলেন অজি ক্যাপ্টেন,ব্যাটিংয়েও আবার ইংলিশ ক্যাপ্টেন! ক্যাপ্টেন বনাম ক্যাপ্টেন লড়াই! দেখা যাক এ লড়াইয়ে জয় কার হয়!
অজি ক্যাপ্টেন বল অফ স্ট্যাম্পের একটু বাইরে আর বুদ্ধিমত্তার সহিত একটু স্লো পিচ করালেন! গ্যাটিং হাটু গেড়ে বসলেন, সুইপের বদলে রিভার্স সুইপ করতে গেলেন তিনি। ওই যে বুদ্ধিমত্তার সহিত একটু স্লো পিচ করালেন বোলার, ফলে ব্যাটে বলে হলো না গ্যাটিংয়ের! তার গ্লোভসে লেগে বলের গন্তব্য উইকেট কিপার গ্রেগ ডিয়ারের গ্লোভসে! তৎকালীন সময়ের সেরা ব্যাটসম্যান পাশার সবচেয়ে বড় দানটা এদিন মারলেন বোলিংয়ে! দলের সবচয়ে সেরা ব্যাটসম্যানকে আউট করার পাশাপাশি এদিন ৩৮ রানে নিয়েছিলেন দুটি উইকেট। শেষ ওভারের নাটকীয়তায় সাত রানের শ্বাসরুদ্ধকর জয় পায় অজিরা, সঙ্গে প্রথমবারের মত শিরোপার মুকুট। যার পার্শ্বনায়ক ছিলেন দলপতি বর্ডার, ব্যাট হাতে ৩১ রানের পাশাপাশি যিনি নিয়েছিলেন দুটি উইকেট।
হ্যাঁ, বলছিলাম অজি কিংবদন্তি অ্যালান বর্ডারের কথা!
আশির দশকে প্যাকার সিরিজ বড্ড বেকায়দায় ফেলে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া দলকে।সিনিয়ররা খেলতে অস্বীকৃতি জানায়। একদম ভাঙ্গাচোরা দল নিয়ে এলান বর্ডার দল গঠনে মেরামতির কাজ করছিলেন। সবাইকে বেঁধেছিলেন এক সুতোয়।।
ক্রিকেট মহলে এ.বি. নামেই বহুল সমাদৃত ছিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৭,৬৯৮ রানের মালিক ছিলেন তিনি। ১৫৬টি টেস্ট খেলে করেছিলেন ১১,১৭৪ রান। দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে করেছেন দশ হাজার রান।
বর্ডার এমন একটি রেকর্ডের রূপকার হলেন যা বিগত চল্লিশ বছর ধরে সেই রেকর্ডে এখন পর্যন্ত ধূলা জমতে দেয়নি। কেউ ভাঙতে পারেননি। একই টেস্টের দুই ইনিংসেই দেড়শোর্ধ রান করার সেই রেকর্ড ভাঙতে পারেনি কেউ এখনো।
দেড়শ টেস্ট খেলা প্রথম ক্রিকেটার তিনি!
টেস্টে তিনি এক সময়ের সর্ব্বোচ রানের বিশ্বরেকর্ডের অধিকারী!
অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট টিমকে অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দেন ৯৩টি টেস্ট।
অস্ট্রেলিয়ার প্ৰথম বিশ্বজয়ী অধিনায়ক!
তিনি ধারাবাহিকভাবে ১৫৩টি টেস্টে অংশগ্রহণ করে বিশ্বরেকর্ড করেন, যা এখনো বহমান!
আইসিসি ক্রিকেট হল অব ফেমে প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে বিশ্বের যে সেরা ৫৫জন ক্রিকেটারকে অন্তর্ভুক্ত করে তাদের মধ্যে অ্যালান বর্ডার তাদের একজন ছিলেন।
২০০০ সালে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া তাদের শতাব্দীর সেরা অস্ট্রেলীয় দলে তাকে দ্বাদশ খেলোয়াড়রূপে অন্তর্ভুক্ত করে।
শুভ জন্মদিন এলান বর্ডার! ১৯৫৫ সালের আজকের দিনে নিউ সাউথ ওয়েলসে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ৬৫তম জন্মদিনের অসংখ্য শুভেচ্ছা ক্যাপ্টেন গ্রাম্পি!