ক্রিস ওকস যদি ইংল্যান্ডের ভিন্ন এক এক যুগে যদি আবির্ভাব হতেন তাহলে হয়ত তার নাম ইংল্যান্ড ক্রিকেটে ভিন্ন ভাবে লেখা থাকত। যে যুগে ইংল্যান্ডে ভাল কোন সিম বলার ছিল না কিংবা ছিলনা কোন ভাল অলরাউন্ডার।
সর্বোপরি তিনি স্যার ইয়ান বোথামের চেয়ে বেশি বিশ্বকাপ জিতেছেন। তিনি লর্ডসে শচীন টেন্ডুলকারের চেয়ে বেশি টেস্ট সেঞ্চুরি করেছেন, বব উইলিসের চেয়ে টেস্টে বেশি বার দশ উইকেট শিকার করেছেন এবং টেস্টে অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের চেয়ে বেশিবার পাঁচ উইকেট নিয়েছেন। তিনি সম্প্রতি বেন স্টোকস বা স্যার গারফিল্ড সোবার্সের চেয়ে কম টেস্টে ১০০০ টেস্ট রান এবং ১০০ টেস্ট উইকেট শিকার করেছেন। ইংল্যান্ডে তাঁর বোলিং গড় জেমস অ্যান্ডারসনের বা স্টুয়ার্ট ব্রডের চেয়ে ভাল।
এত ভাল পরিসংখ্যান থাকার পরও যখন গ্রীষ্মের টেস্ট মৌসুম শুরু হয়েছিল, ইংল্যান্ড দল থেকে তাঁর বাদ দেওয়া নিয়ে মিডিয়াতে খুব কমই কথা হয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চূড়ান্ত টেস্টে ইংল্যান্ডের সেরা বোলার হওয়া সত্ত্বেও, নতুন বলে তাকে দিয়ে করানোর কথা তেমন বিবেচনা হয়নি। বোলার হিসাবে তিনি সবসময় অ্যান্ডারসন এবং ব্রডের দ্বারা ছায়ায় রয়ে গেছেন। অলরাউন্ডার হিসাবে ঠিক তেমনি তিনি স্টোকসের ছায়ায় রয়ে গেছেন। এখনও এমিরেটস ওল্ড ট্র্যাফোর্ডকে প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ হবার পরপর ও ইংল্যান্ডের প্রথম পছন্দের একাদশে তার জায়গা একদম নিশ্চিত নয়। স্টোকস যখন বোলিং করতে পারেন, তখন অ্যান্ডারসন, ব্রড এবং জোফরা আরচারের মধ্যে কাকে বাদ দিয়ে দল সাজাবে ইংল্যান্ড?
গত দু’টি ম্যাচের পরে, ওকস তার সক্ষমতার দারুন পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। তার বল অ্যান্ডারসনের চেয়ে বেশি মুভমেন্ট করছে, তিনি ব্রডের চেয়ে দারুন গতিতে পিচে বলিং করেছেন এবং তিনি আরচারের চেয়েও বেশি ধারাবাহিক ছিলেন। তিনি এই গ্রীষ্মে ১৫.৮০ রান ব্যয় করে ১৫ উইকেট নিয়েছেন। ইংল্যান্ড যদি পরের ম্যাচের জন্য বা নাম বা খ্যাতি অথবা প্রতিশ্রুত কোন বলারের যোগ্যতার বিচারে বাছাই করে তবে ওকস প্রথম বোলার হিসাবে নির্বাচিত হবার কথা।
তিনি যখ গত ম্যাচে দ্বিতীয় ইনিংসে ক্রিজে আসেন তার সামনেই ওলি পেপ আউট হয়ে ফিরে গেল ইংল্যান্ড তখনে জয়ের থেকে ১৬০ রান দূরে। ওকসের শেষ ৬ টেষ্ট ইনিংসে গড় রান ছিল ৫.২২। ওলি পেঁপের আউট হবার সাথে সাথে এই প্রশ্ন সংঙ্গত ভাবেই আসতে পারে বাকি রান গুলি কিভাবে আসবে? তাও আবার এই ব্যাটিং ট্রাকে পাকিস্তানের মত দারুন পেস এ্যটাকের বিরুদ্ধে। ইংল্যান্ডের দারুন ম্যাজিক্যাল কিছু দরকার ছিল।
আগের রাতেই ওকস উল্লেখ করেছিলেন আক্রমন হচ্ছে সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট রক্ষন কৌশল। তাই তিনি নতুন বলে পাকিস্তান বলারদের একদমই সুজোগ দেননি। তিনি চাননি পাকিস্তান দ্বিতীয় নতুন বলে একদম সুযোগ গ্রহণ করুক। তাই এমন কোন বল কাল ছিল না তাতে ওকসের আউট হবার নাাম লেখা থাকে।
ওকস সরাসরি আক্রমনাত্মক খেলা শুরু করেন এবং প্রথম থেকেই বলের লাইনে না গিয়ে কিছুটা রুম নিয়ে বলগুলি অফসাইড ও কাভারের দিকে বেশি খেলেছেন। তার প্রথম বাউন্ডারি যে শট থেকে এসেছে সেটি কাট শটের চেয়ে স্লাসড বেশি ছিল। তিনি বলের উপরে চড়াও হয়েছেন যেন বল তাড়াতারি পুরনো হয় এবং পাকিস্তান পেসাররা নতুন বলের সুবিধা কম পায়। ফলস্বরূপ তিনি ৫০ রান করেছেন মাত্র ৫৯ বলে তাতে চারের মার ছিল ৮ টি। একটা সময় যে টার্গেট অসম্ভব মনে হচ্ছিল বাটলারের সাথে ১৩৯ রানের পার্টনারশিপে সেটি দারুন সহজ হয়ে যায়।
প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে তার ১০টি শতক রয়েছে। ওডিআইতে ৮ নম্বরে নেমে ৯৫ রানের দারুণ এক রেকর্ড আছে তার। নতুন বলে তার সিম পজিশনিং অসাধারণ, তিনি দুই দিকেই বল টার্ণ করাতে পারেন। ইংল্যান্ডের মাটিতে তিনি অসাধারণ বলিং। করেন। তদুপরি তিনি তার খেলায় সব সময় একটা এগ্রেশন নিয়ে আসেন।
জো রুট তার সম্পর্কে বলেন, ‘ওকস সবসময় মাঠের ভিতরে ও বাইরে সবসময়ই খুবই ধারাবাহিক। আপনি র্নিরদ্বিধায় তার উপরে ভরসা করতে পারেন এবং আপনি যা চাইবেন তিনি তা আপনাকে ডেলিভারি দিতে পারবে। শেষ কিছু বছর ধরে তিনি অত্যন্ত ধারাবাহিক এবং তার খেলায় তিন অত্যন্ত উন্নতি করেছেন।’