ক্রিকেটকে বদলে দেওয়া এক সুপার হিরো

0
3130

১৯৯২ এর বিশ্বকাপ মঞ্চ পাকিস্তান বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যেকার খেলা ব্যাটিংএ ইনজামাম উল হক। ইনজি ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টের দিকে ঠেলে দিয়ে দ্রুততার সাথে সিঙ্গেল নেবার জন্য দৌড় শুরু করেন। নন স্ট্রাইকার ব্যাটসমান রান নিতে অসম্মতি দেয়। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ফিল্ডিং করছিলেন ঝন্টি রোডস্ তিনি বলটি কুড়িয়ে থ্রো করার পরিবর্তে বল নিয়ে মিলি সেকেন্ডের মধ্যে স্টাম্পের দিকে দৌড় চলে আসে। বল হাতে স্টাম্প ভাঙ্গার সময় ইনজামাম ক্রিজের কাছাকাছি ও পোঁছুতে পারেনি। তার নিজের ভাষায়, “৫০% সুযোগ ছিল যদি আমি বল ছুড়ে মারতাম স্টাম্প ভাঙার কিন্তু বল হাতে রেখে স্টাম্পগুলিকে ভাঙ্গার ১০০% সুযোগ ছিল।” এটাই দ্রুততম পন্থা ছিল শেষ দেঢ় মিটার জায়গা কাভার করার জন্য, এবং ওটা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল।

একজন জনাথন নীল রোডসে কি ভাবে সজ্ঞায়িত করলে ভাল হবে? কেউ বলে সুপার ম্যান, কেউ বা তাকে বলে পাখি, কেউ বা বলে বিমান যে বিশেষনে বিশেষায়িত করুন না কেনো তা ঝন্টি রোডস এর অসামান্য ফিল্ডিং দক্ষাতার সাথে তুলনা কম হবে। ৯০ এর দশকে ফিল্ডিং এর ক্ষেত্রে অসামান্য বিপ্লবিক পরিবর্তন এনে ছিলেন তিনি। সেই একটি রান আউট ক্রিকেটের যে তিন দিক রয়েছে (ব্যাটিং বোলিং এবং ফিল্ডিং) তার মধ্যে সবচেয়ে যে আন্ডাররেটেড ছিল ফিল্ডিং তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে দিয়েছে।

রোডস ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে প্রথম ফিল্ডিং সুপার স্টার। তিনি ক্রিকেটে ফিল্ডিং এর বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন তার কারনে সারা ক্রিকেট বিশ্বে ফিল্ডিং কোচের আবির্ভাব হয়েছে, তার জন্য ফিল্ডিং এ ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়েছে। সব ক্রিকেটাররা এখন ঝন্টি রোডসকে আইডল মানে তারা ঝন্টির মত ফিল্ডার হতে চায়।

১৯৯৯ বিশ্বকাপ থেকে রবার্ট ক্রফ্টের ক্যাচ কার মনে আছে বা কে দেখেছেন? ক্রাফ্ট আসলে কোনও ভুল করেনি, এবং এটি বেশ ভাল স্ট্রোক ছিল। কিন্তু সবুজ রঙের মায়াবী পাখির মত হঠাৎ বাতাসে লাফিয়ে উঠে বলের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল সবাই বুঝতে পেরেছিল যে সে এটি ধরতে সক্ষম হবে না, কিন্তু বাতাসের মাঝে আড়াআড়িভাবে ছোঁ মারল, বলটি তার পিছনে দিকে চলে যায়, রোডস, তখনো শূন্যে থাকা অবস্থায় ক্যাচটি ধরতে একশো আশি ডিগ্রি এংঙ্গেলে শরীর ঘুরিয়ে দেয়। জিমন্যাস্টদের কথা বাদ দিলাম, মার্ভেল কমিক্সের সুপারহিরোদের ও এই দৃশ্য দেখলে হিংসে হত।

রোডস যখন ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ফিল্ডিং করত তখন ব্যাটসম্যান রা আতংকে থাকত। যখন তারা কোন বল পয়েন্ট বা ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে খেলত তাখন ক্রিজ ছেড়ে বাইরে যেতে দ্বিধা বোধ করত। যদি শর্ট বলো হতো তাতেও পয়েন্টে খেলতে খেলতে দ্বিধা বিভক্ত থাকত কোন মানব বিমান এসে শূন্য থেকে ধরে না ফেলে।

সংক্ষেপে যদি বলা হয় রোডস্ ফিল্ডিংয়ে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ক্রিকেটে রোডস যুক্ত হবার আগে এটি ফিল্ডিংকে ঐ ভাবে নজরে আনা হয় নি। বলাররা সাধারণত থার্ড ম্যান বা ডিপ ফাইন লেগে অঞলে ফিল্ডিং করত একটু ধীরে গতির ফিল্ডারদের মিড অফে লুকিয়ে রাখা যেত। কিন্তু রোডস্ এর আবির্ভাব এর পর সব জায়গায় ফিল্ডারদের তৎপর হবার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়‌।

কোন জিনিস রোডসকে ব্যতিক্রমী করে তোলে? রাগবিতে যে সব দেশ ভাল খেলে তাদের ক্রিকেটাররা সাধারণত অন্যদের চেয়ে ফিট থাকে এবং রোডসও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তিনি হকিতে ১৯৯২, বার্সেলোনা অলিম্পিকের জন্য তিনি সেন্টার-ফরোয়ার্ড হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু, দক্ষিণ আফ্রিকা মূল পর্বের জন্য নির্বাচিত হয়নি। রোডসকে ১৯৯৬ সালের আটলান্টা অলিম্পিকের জন্যও তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল, তবে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটের কারণে তাকে বাদ পরতে হয়েছিল।

একই ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে অনেক খেলোয়াড়ই আসেন তবে কোন জিনিস রোডসকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলল?

রোডস যে কারো চাইতে দ্রুততার সহিত মুভমেন্ট করতে পারত। এবং ব্যাটসম্যান দের বডি ল্যাঙ্গোয়েজ দেখে আন্দাজ করতে পারত সে কোথায় শর্ট খেলবে, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তিনি সঠিক থাকতেন। তার পা খুব দ্রুততার সহিত মুভ করত তার শরিরের রিফ্লেকশন অসাধারণ ছিল তাঁর শূন্যে দারুন ডাইভ করতে পারার ক্ষমতা ছিল এবং ডাইভ করতে তিনি কখনো ভয় পেতেন না।

তিনি কঠোর পরিশ্রমী ছিলেন তার ফিল্ডিং প্রাকটিসের জন প্রায়ই টিম বাস তার জন্য অপেক্ষা করত। তার অসাধারণ ক্যাচ গুলি সম্পর্কে মানুষ জানতে চেয়ে অবাক হত যে তিনি প্রচুর পরিশ্রম করেন ফিল্ডিং এর পিছনে।

তিনি নিজেকে ঐ ভাবে সেরা ভাবতে নারাজ ছিলেন। তিনি নিজেকে একজন ফিল্ডার হিসেবে ভাবতে ভাল বাসতেন তিন নিজেকে একজন বল স্টপার ভাবতে ভালবাসতেন তার কাজ ক্যাচ ধরা বল থামানো এবং ব্যাটসম্যানদের উপর চাপ তৈরি করা।

এত ফিল্ডিং প্রশংসায় আমরা ব্যাটসম্যান রোডসকে ভুলে না যাই রোডসও ব্যাটিংয়ে অনেক বেশি কার্যকর ছিলেন। তার ক্যারিয়ারে টেস্টে ৩ টি সেঞ্চুরির সাথে ৩৬.৫৬ গড়ে ২,৫৩৩ রান ওয়ানডেতে ২ টি শতকের সহ ৩৫.১১ গড়ে ও ৮০.৯ স্ট্রাইক রেটে ৫,৯৩৫ রান করেন। এগুলি তেমন উল্লেখযোগ্য সংখ্যা নয়, তবে রোডস যে ভাবে রান করেছিলেন তাকে আলাদা করে তুলেছিল।