বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটা কথা প্রায়শই শোনা যায়, ” খেলাধুলা আর পড়ালেখা নাকি একসাথে হয় না!” । পড়ালেখা করছেন আর তার সাথে পুরোদস্তুর পেশাদার ক্রিকেট খেলছেন এমন নজির বাংলাদেশে বিরল। তার উপর যদি বলি পেশাদার ক্রিকেটের পাশাপাশি একজন পড়ালেখা করছেন দেশের নামকরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে, তাহলে যেকারো ভ্রু কুচকে যেতে বাধ্য! এতক্ষন বলছিলাম বাংলাদেশ দলের ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত মুখ উদীয়মান পেস সেনসেশন শহিদুল ইসলামের কথা।
পড়ালেখা নাকি পেশাদার ক্রিকেট? প্রতিটি মধ্যবিত্ত ক্রিকেট পাগল কিশোরের মনে এই দ্বিধা কাজ করে। বেশিরভাগই যেকোন একটি বেছে নেন। এই দিক দিয়ে শহিদুল সবার দিক দিয়ে আলাদা। তিনি বেঁছে নিলেন দুটোকেই। পেশাদার ক্রিকেটও খেলবেন, সাথে চলবে পুরোদমে পড়ালেখা!
ক্রিকেটে শহিদুলের আগমন একপ্রকার বাজি ধরেই। অসংখ্য মধ্যবিত্ত বাবা-মায়ের মতো নিজের সন্তানের ক্যারিয়ার হিসেবে শহিদুলের বাবা-মাও বেছে নিলেন পড়ালেখাকেই! তবে ক্রিকেট ভালোবাসা শহিদুলের মন পরে রয়েছে ক্রিকেটে। ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন যে তার বুকে বাসা বেঁধেছে! বাসায় ক্রিকেট প্রশিক্ষণের কথা বলার সাহস ছিল না, তবে না বলেও থাকলেন না। বললেন ঠিকই, কিন্তু একটু অন্যভাবে। এসএসসি পরীক্ষায় এ প্লাস পেলে ক্রিকেট প্রশিক্ষণ করতে দিতে হবে এটাই ছিল শর্ত। এসএসসি পরীক্ষা দিলেন, এ প্লাসও পেলেন। এবার শুধুই স্বপ্ন পূরণের অপেক্ষা। স্বপ্ন পূরণ বললেই যে স্বপ্ন পূরণ হয়ে যাবে এমনটা ভাবার কোনো অবকাশ ছিল না শহিদুলের কাছে। বারকয়েক বয়সভিত্তিক দলে ট্রায়াল দিলেও সুযোগ পাননি মূল দলে খেলার। এইচএসসি পরীক্ষার আগেই তৃতীয় বিভাগের মাধ্যমে খেলে ফেলেন ঢাকা লীগে। এরপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এইচএসসি পরীক্ষার পর দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। ততদিনে খেলে ফেলেছেন ফার্স্ট ক্লাস ও লিস্ট এ ক্রিকেটে।
সর্বশেষ বিপিএলে খেলেছেন খুলনা টাইগার্সের হয়ে।
২০১৯ বিপিএলে খেলেছেন রংপুর রাইডার্সের হয়ে। রংপুরের নেটে বল করতে গিয়ে নজরে আসেন টম মুডির! রাইডার্সের ড্রেসিংরুমে জায়গা পেয়ে মেলে ধরলেন নিজেকে। ১৩ ম্যাচে ১৯ উইকেট নিয়ে হয়েছিলেন বিপিএলের পঞ্চম সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি।
২৯ টি ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচে ৭০টি উইকেট এই পেসারের!
১৪ লিস্ট এ তে ১৬ টি আর ২২ টি টি-টুয়েন্টিতে নিয়েছেন ৩৫টি উইকেট!
নির্বাচকরা তার মধ্যে পেয়েছেন সম্ভাবনা। ফলাফল- বর্তমানে তিনি আছেন হাই পারফরম্যান্স দলে!
১৯৯৫ সালের আজকের দিনে জন্মগ্রহণ করেন শহিদুল ইসলাম। শুভ জন্মদিন শহিদুল ইসলাম। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ভবিষ্যতের পেস কান্ডারি হতে পারেন তিনি।