ক্রিকেট ব‍্যাটের ইতিহাস!

0
3104

বর্তমানে পৃথিবীর জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে ক্রিকেট ২য় নম্বরে অবস্থান করছে। আজকের দিনের আধুনিক ক্রিকেটের সংস্করণ আজ এক দিনে আসেনি। প্রথমদিকের ক্রিকেট অনেক ধীর গতির ছিল রান ও কম হত। টেষ্ট ক্রিকেট ছিল ৬ দিনের। আজ আধুনিক টি-টুইন্টির যুগে ধুন্ধমার মার ক্রিকেটের চেহারাই পাল্টে দিয়েছে। কিন্তু যে ক্রিকেটের সরঞ্জাম দিয়ে এই রানের ফোয়ারা ছোটানো হয় তা হচ্ছে ব‍্যাট। ক্রিকেট ইতিহাসে ব্যাটের ক্রমবির্তন নিয়ে আজকের এই আয়োজন।

১৬২৪ সালের দিকের ঘটনা তখনকার বোলাররা বল করত আন্ডার আর্ম। এক ব‍্যটসম‍্যান তার ক‍্যাচ ধরা প্রতিহত করতে গিয়ে এক ফিল্ডারের মাথায় আঘাত করে। যার ফলশ্রুতিতে তার মৃত্যু হয়। তখন আসলে কোন নির্ধারিত আইন ছিল না যে ব‍্যাটসম‍্যান কি করতে পারবে কি পারবে না। আর তখনকার ব‍্যাটের আকার ছিল কিছুটা বর্তমান হকি ব‍্যাটের মত।

১৭৭০ সালের ঘটনা ঐ সময় ব্যাটের আকারে পরিবর্তন আসল যা চওড়ায় ৪.২৫ ইঞ্চি করা হয় যা এখন পর্যন্ত বলবত আছে কিন্তু তখন অপেক্ষাকৃত ভারি ব্যাটে খেলা হত। বোলিং তখন পর্যন্ত আন্ডার আর্মেই করা হত কিন্তু লেন্থ বলিংটা তখন চালু হয়।

১৮০০ শতাব্দীর পর রাউন্ড আর্ম বলিং চালু করা হয় যাতে বলাররা আরো বাউন্সার দিতে পারে। যার ফলশ্রুতিতে অপেক্ষকৃত হালকা ও চওড়া ব‍্যাটের প্রবর্তন হয়।

১৮৩০ সাল পর্যন্ত ব্যাট গুলি সাধারনত একক উইলো কাঠের দ্বারা তৈরি হত। কিন্ত ব‍্যাটের ভাঙার প্রবণতা বাড়াতে এবং বলের গতি ও বাড়ার কারনে‌ ব্যাটে আলাদা ভাবে হাতল সংযুক্ত করা হয়। হাতল গুল সাধারণ উইলো গাছ বা এ্যাস গাছ দ্বারা তৈরি করা হতো।

১৮৩৫ সালে ব্যাটের দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করে দেয়া হয় ৩৮ ইঞ্চিতে যা এখন পর্যন্ত অপরিবর্তিত আছে।

১৮৪০ শতাব্দীর দিকে ব্যাটের হাতলে স্প্রিং এর ব্যবহার শুরু হয়। তখনকার দিনে কচ্ছপের খোলোস ব্যবহার করা হত স্প্রিং হিসেবে কিন্তু পরবর্তীতে ভারতীয় রাবার এর ব‍্যবহার করা

১৮৫৩ সালে টমাস নিক্সন নার্টিংহামশেয়ারের এক ক্রিকেটার সর্বপ্রথম হাতলে বেতের ব্যবহার শুরু করেন।

১৮৬৪ খৃষ্টাব্দে ওভার আর্ম বলিং চালু হওয়ার কারনে অপেক্ষাকৃত হালকা ব‍্যটের প্রয়োজন হয়। তখন ব‍্যাটের ব্লেডের শেপেও পরিবর্তন আসে। তখন ব্যাটের হাতল বেত ও ইন্ডিয়ান রাবার দ্বারা প্রস্তুত করা হত।
১৮৭০ খৃষ্টাব্দে বর্তমান ব্যাটের যে আকার এই আকারে রূপদান করা হয়।

সাধারণ ক্রিকেট ব্যাট ইংলিশ উইলো কাঠ দ্বারা প্রস্তুত করা হত এবং এতে লিনসিড অয়েল (তিসির তেল) এর প্রলেপ ব্যবহার করা হত। এই তেলের প্রয়গের ফলে এর স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পায়। বলে যখন আঘাত করা হয় তখন ক্ষতি সাধন কম হয়। ব্যাট গুলির বিপরীত পার্শ্বে ভি শেপ রাখা হয় যার কারনে মোটা উইলো কাঠ দ্বারা যখন ব‍্যট বানন হয় উল্টা পাশে ভি শেইপ আনার জন‍্য অতিরিক্ত কাঠ ছেঁচে ফেলা হয়। আর ভি শেইপ আনার উদ্দেশ্য হচ্ছে ব‍্যটের পাওয়ার বৃদ্ধি করা।

বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী একটা ব‍্যাট ৪.২৫ ইঞ্চি চওড়া এবং ৩৮ ইঞ্চি লম্বা হয় ব‍্যটের ওজন নিয়ে কোন ধরা বাধা নিয়ম নেই। কিন্তু সাধারণ ব‍্যট গুলি ১.২-১.৪ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। ব‍্যটের হাতলে রাবারের গ্রীপ ব‍্যবহার করা হয় যার কারনে এটি ধরার জন্য সুবিধা জনক হয়।

আমরা সবাই জানি আধুনিক নতুন একটি ব‍্যাট কিনে আনলাম আর কিন্তু সাথে সাথে ম‍্যাচে খেলার পুরোপুরি উপযোগী হয় না‌। ব্যাটের পাওয়ার দীর্ঘস্থায়িত্বতা বৃদ্ধির জন‍্য আগে নক করতে হয়‌। পুরাতন বল এবং কাঠের হাতুড়ি দ্বারা। এর ফলে নতুন ব‍্যাট ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা কমে এবং ব‍্যটের পূর্ণ শক্তি যেন শটে ব‍্যবহার করা যায়।

১৯০০ সালের দিকে ব‍্যাটের ক্ষেত্রে নতুন বিপ্লব শুরু হয় তখন কাশ্মীরি উইলো খুব জনপ্রিয়তা লাভ করে। যেগুলি ওজনে ইংল্যান্ডের গুলির কাছা কাছি ছিল। কিন্ত ওগুলি তুলনামূলক কম টেকসই ছিল।
বড় পরিবর্তন আসলো যখন গেরি নিকোল আর জন নিউবেরি তাদের স্কুপ ব‍্যাট এর প্রবর্তন করলেন। এ ব‍্যাট গুলির বীপরিত প্বার্শে কিছুটা ফাঁপা ও ডিজাইন করা থাকে।

শচীন টেন্ডুলকার ও ল‍্যান্স ক্লুজনার অপেক্ষাকৃত ভারি ব‍্যাট ব‍্যবহার করতেন। যার ফলশ্রুতিতে ব‍্যাক ইঞ্জুরির দেখা দেয়। তখন তুলনা মুলক হালকা ব‍্যাটের দিকে সবাই মনযোগ দেয়। ব‍্যাটের ওজন নির্ভর করে উইলো কাঠের মধ্যে আদ্রতা কি পরিমান আছে তার উপরে। যত কম আদ্রতা থাকবে ব‍্যট তত হালকা হবে।

১৯৭৯ সালে অস্ট্রেলিয়ান ডেনিস লিলি একবার এলুমিনিয়ামের ব‍্যাট নিয়ে খেলতে নামেন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তখন এই ব‍্যাটের কমপ্লেইন আসে যে বল অতি দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তখন ঐ ব‍্যাট নিষিদ্ধ করা হয়। এর পর থেকে ব‍্যাট তৈরির কাঁচামাল সবসময় কাঠ ই ছিল।

২০০৫ সালে কোকাবুরা কার্বোন ফাইবারের এক ব‍্যট তৈরি করে যে ব‍্যাট দিয়ে সর্বপ্রথম খেলেন রিকি পন্টিং যা বড় বিতর্কের জন্ম দেয়। ঐ ব‍্যাট দিয়ে পন্টিং তখন বেশী রান পাচ্ছিলেন । এবং বল তুলনামূলক বেশি গতি পেত ঐ ব‍্যাট দিয়ে মারলে। তৎকালীন সময়ে আইসিসি ঐ ব‍্যাট ব‍্যান করে।

ক্রিকেটের শুরু থেকে এ পর্যন্ত অনেক পরিবর্তন এসেছে ক্রিকেট ব‍্যাটে অনেক গবেষণা হয়েছে। এখনো চলছে সামনেও চলবে। আমরা হয়ত সামনে আরো পরিবর্তন দেখব কালের বির্বতনে।