বিশ্বকাপ জিতেই তবে আমি বিয়ে করবো”, “টি-২০ বিশ্বকাপ জেতার সকল রশদই আমাদের আছে”– কথাগুলো ছোট দেশের বড় তারকা রশিদ খানের। দিনশেষে আপনি ট্রোল করুন বা হাসুন এই মনোভাব সবার মধ্যে থাকে না। কেউ মায়ের পেট থেকে এগুলো শিখে বের হয় না। জীবনযুদ্ধের প্রতিটি লড়াই তাকে শিখিয়ে দেয় এই মনোভাব।
যে দেশ যুদ্ধের, যে এলাকা যুদ্ধের সেখান ক্রিকেটীয় সাধনা, ভালবাসার মিশেলে বিশ্বমঞ্চ মাতানো কারো নিকট স্বপ্ন; আর রশিদের নিকট সেটা বাস্তব। গুলাগুলির ধ্বংসস্তূপ থেকে হাতে বন্দুক তুলে না নিয়ে নিয়েছেন বল ব্যাট। তার বল ব্যাট হাতে নেয়া কি ক্রিকেটপ্রেমীদের নিকট চোখের শান্তি? হয়তো হাতে বন্দুক নিলে চিত্রটা হতো ভিন্ন। সেক্ষেত্রে আমরা একটু সৌভাগ্যবানই বলা চলে!
পরিবারের এগারো ভাইবোনের মধ্যে রশীদ একজন। তরুন বয়সে তার পরিবার আফগান যুদ্ধ থেকে পালিয়ে পাকিস্তানে গিয়ে ওঠে। পরবর্তীতে আফগানিস্তানের যুদ্ধ থামলে আবার দেশে ফেরে রশিদ পরিবার। সেখানে স্বাভাবিক জীবনযাপনের পাশাপাশি শুরু হয় বড় ভাইদের সাথে ক্রিকেট খেলার সূচনা। এরপরে আর পিছে ফিরে তাকাতে হয় নি। রশিদ শুধু ছুঁটে চলছেন!
২০১৫ সালে জাতীয় দলে অভিষিক্ত রশিদ খান দিনের পর দিন মেতেছেন রেকর্ড ভাঙাগড়ার খেলায়। ২০১৬ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় রশিদের। ইংল্যান্ড লায়ন্সের বিপক্ষে আবুধাবির সে ম্যাচেই বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে নিজের সক্ষমতা দেখিয়েছেন। দুই ইনিংসে ১২ উইকেটের সঙ্গে ব্যাট হাতে ৭৭ রান করেছেন রশিদ।
২০১৭ সালে অসাধারণ পারফরম্যান্সের কারনে সেই বছরের বর্ষসেরা সহযোগী ক্রিকেটার হিসেবে রশিদকে নির্বাচিত করে আইসিসি। ২০১৭ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সেই আইপিএলের নিলামে ৪ কোটি রুপি দিয়ে তাঁকে দলে নেয় সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। সহযোগী দেশের খেলোয়াড় হিসেবে রেকর্ড গড়া রশিদকে পরের বছরই আবার ৯ কোটি রুপি দিয়ে দলে টেনেছে হায়দ্রাবাদ।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সর্বকনিষ্ঠ বোলার হিসেবে আইসিসির ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠেছেন রশিদ, সে মাসেই টি-টোয়েন্টিতেও শীর্ষ বোলার হয়েছেন। ২০১৮ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে প্রথমবারের মতো আফগানিস্তানের অধিনায়কত্ব করেন এই লেগ স্পিনার। মাত্র ১৯ বছর ১৬৫ দিন বয়সে দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে সবচেয়ে কম বয়সে আন্তর্জাতিক অধিনায়ক হওয়ার রেকর্ড গড়েছেন। একই বাছাইপর্বে শাই হোপকে আউট করে ওয়ানডেতে সর্বকনিষ্ঠ ও দ্রুততম বোলার হিসেবে ১০০ উইকেট পাওয়ার রেকর্ড গড়েছেন। মাত্র ৪৪ ম্যাচেই এ মাইলফলক ছুঁয়েছেন রশিদ। তার আগে এ রেকর্ড ছিল অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্কের। অস্ট্রেলীয়ান পেসারের এ জন্য দরকার হয়েছিল ৫২ ম্যাচ।
২০১৯ বিশ্বকাপ রশিদের জন্য শুধুই হতাশার। কখনো ইংলিশ দলপতি ইয়ন মরগানের কাছে বল হাতে বেদন প্রহার সহ্য করা কিংবা বিশ্বকাপে ভারত পাকিস্তানের সাথে ক্লোজ ম্যাচ হার এগুলো শুধু জ্বালাবে রশিদকে। বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর আফগানদের তিন ফরমেটেরই দায়িত্ব পান রশিদ। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিপক্ষে মাত্র ২০ বছর ৩৫০ দিন বয়সে টস করতে নেমে সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট অধিনায়ক হওয়ার রেকর্ড গড়েন রশিদ। ১৫ বছর আগে জিম্বাবুয়ের টাটেন্ডা টাইবুর টেস্টে ২০ বছর ৩৫৮ দিন বয়সে অধিনায়কত্ব করার রেকর্ড ভাঙেন তিনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে সেই ম্যাচ জিতে আফগানিস্তান এবং বল ব্যাট হাতে অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সের কারনে ম্যাচ সেরা হন রশিদ খান।
বোলিংয়ে এতসব অর্জনেও রশিদের অন্য সত্ত্ব ঢাকা পড়ে না। রশিদ শুধু বল হাতেই নন, ব্যাটিং ও ফিল্ডিংয়েও দলের অন্যতম ভরসা। রকেটের গতিতে ক্যাচ কিংবা দ্রুত থ্রো এসব কাজে পাকা হাত রশিদের। ব্যাটিংয়ে ইনিংসের শেষ দিকে এসে ঝড় তোলার অবিশ্বাস্য ক্ষমতা আছে তার।
আফগান যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে বাঁচা এই রশিদের জন্ম পূর্ব আফগানিস্তানের নানগারহার এলাকায় ১৯৯৮ সালের আজকের দিনে, অর্থাৎ ২০শে সেপ্টেম্বর। রশিদ খান আপনার বাইশতম জন্মদিন শুভ হোক। আশা করি দুর্দান্ত গতিতে ছুটে চলবেন আপনি। আপনার হাত ধরেই উড়ুক আফগান ক্রিকেটের বিজয় ঝান্ডা।
শুভ জন্মদিন রশিদ খান…
লিখেছেনঃ হৃদয় সাহা