ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকার ৫ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে দারুন জমজমাট লড়াইয়ে ১ রানে জয় পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। খেলাটি ছিল দারুন রোমাঞ্চে ভরপুর। টি-টোয়েন্টিতে যেমন প্রতিমুহূর্তে ম্যাচের মোমেন্টাম পরিবর্তন হয় এই ম্যাচে ঠিক তেমনই হয়েছে।
টসে জয়লাভ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক কেরণ পোলার্ড বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। দক্ষিণ আফ্রিকার দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান রেজা হেন্ড্রিক্স ও কুইন্টন ডি কক খুব দারুণ শুরু করেন প্রথম উইকেট জুটিতে ৪২ রান সংগ্রহ করেন তারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেয় ওবেদ ম্যাকয়। ১৭ রানে হেন্ড্রিক্স ফ্যবিয়ান এ্যলেন এর হাতে ক্যাচ দিয়ে পাভিলিয়নের পথ ধরে।
দলীয় অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা মাত্র ১ রান করে ম্যাকয়ের দ্বিতীয় শিকারে পরিনত হয়। তৃতীয় উইকেট জুটিতে কুইন্টন ডি কক ও মারকরাম ৪৩ রান যোগ করে। ডি এম ব্রাভো উন্ডিজদের পক্ষে তৃতীয় ব্রেক থ্রু এনে দেন, ফ্যাভিয়্যন এ্যলেন দারুণ এক ক্যাচে ফিয়িয়ে দেন মারকরামকে।
কুইন্টন ডি কক ও ভ্যান ডার ডুসন এই দুই ব্যাটসম্যান নিজেদের মধ্যে ৬০ রানের দারুণ এক পার্টনারশিপ করে দলকে ভালো পজিশনে নিয়ে যান। দলীয় ১৪৭ রানে ডি কক ৭২ (৫১) রানে ব্রাভোর বলে ল্যন্ডন সিমন্সের কাছে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান। এরপরে ভ্যান ডার ডুসন (৩২) দলীয় ১৬১ রানে আউট হয়ে গেলে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস আর খুব বেশি লম্বা হতে পারেনি। ২০ ওভারে ৮ উইকেটে সংগ্রহ করে ১৬৭ রান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে ওবেদ ম্যাকয় ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেন ৪-২২-৪। এবং ডোয়েন ব্রাভো ২৫ রানে ৩টি উইকেট লাভ করে।
জবাবে ১৬৮ রানের টার্গেটে ব্যাটিং করতে নেমে উইন্ডোজ দুই ওপেনার লেন্ডল সিমন্স ও ইভেন লুইস তাদের সভাবোচিত আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুরু করেন। তারা প্রথম উইকেট জুটিতে সংগ্রহ করে ৫৫ রান। সিমন্স ২২(২২) রানে উইকেট-রক্ষক কুইন্টন ডি ককের তালুবন্দি হয়ে জর্জ লিন্ডের শিকারে পরিণত হয়। মাত্র ২ রানের ব্যাবধানে অপর উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ইভেন লুইস চায়নাম্যান তাবরিয়াজ শামসির শিকারে পরিণত হন ভ্যান ডার ডুসনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ২৭ (২১) রানে ফিরে যান।
জেসন হোল্ডার ১৬(১১) সিমরান হেটমায়ার ১৭(১০) এই দুই ব্যাটসম্যান আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে থাকেন এবং ৩৩ রানের দারুণ এক জুটি গড়েন। এই জুটিকে থামান লুঙ্গি এনগিডি। তার প্রথম শিকারে পরিণত হন জেসন হোল্ডার মারকারামের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান। দলীয় সংগ্রহ তখন ১০.১ ওভারে ৯০ রান। মাঠে এখনো খেলতে নামা বাকি কেরণ পোলার্ড, এন্ড্রে রাসেল, ফ্যাবিয়ান অ্যালেন, ডোয়েন ব্র্যাভোর মত হার্ড হিটিং ব্যাটসম্যানরা
কিন্তু ১৪ রানের ব্যবধানে আরও দুইটি মূল্যবান উইকেট হারিয়ে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সিমরান হেটমায়ার ১৭(১০) এবং কেরণ পোলার্ড ১(২)। এই দুই মূল্যবান উইকেট হারানোর পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বেশ খানিকটা চাপে পড়ে।
কিন্তু উপরে তখন ও ছিলো অ্যান্ড্রো রাসেল এবং উইকেট রক্ষক নিকোলাস পুরান। এই দুই ব্যাটসম্যান নিজেদের মাঝে ৩৬ রানের দারুণ এক পার্টনারশিপ করেন। এই দুই জন যতক্ষন ছিলেন মাঠে খেলা উন্ডিজদের পক্ষে ছিল। রাসেল ২৫ (১৬) ফ্যাবিয়ান এ্যলেন ১৪(৯) এই ছোট দুইটি ক্যামিওতে দারুন ভাবে খেলায় ফিরায় উন্ডিজরা।
১৬.৬ ওভারে এন্ড্রে রাসেল নকিয়ার বলে মারকারামের অসাধারণ এক ক্যাচে আউট হয় তখন দলীয় সংগ্রহ ১৪০। ৩ ওভারে প্রয়োজন আর ২৭ রান মাঠে নামেন ফ্যাভিয়ান এ্যলেন। ১৯ তম ওভারে নিকোলাস পুরান আবারো নকিয়ার বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে প্যাভেলিয়নে ফিরে যান। শেষ ওভারে ইংলিশদের জয়ের জন্য প্রয়োজন ১৪ রান। শেষ ওভার বল করতে আসে রাবাদা স্ট্রাইকিং প্রান্তে ফ্যাবিয়ান এ্যলেন, প্রথম বলটি ওয়াইট দিয়ে শুরু করেন, এর পরবর্তী বলটি ডট। ৫ বলে জয়ের জন্য প্রয়োজন ১৩ রান। দ্বিতীয় বলটি বাউন্ডারি ৩ নং বল শূন্য। ৩ বলে প্রয়োজন ৯ রান। চতুর্থ বলে ২ রান, আর প্রয়োজন ২ বলে ৮ রান র্দুরভাগ্য বশত পরের বলটি থেকে কোন রান আসেনি। এবং ওভারের সর্বশেষ বলে মিড উইকেট এর উপর দিয়ে অসাধারন একটি ছয় ফলাফল দক্ষিণ আফ্রিকা ১ রানে বিজয়ী।
অসাধারণ এই ম্যাচটির পরে দক্ষিণ আফ্রিকা পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ২-১ এ এগিয়ে গেল। সিরিজের পরবর্তী ম্যাচ টি আগামী শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে। ম্যাচের ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হন তাবরিজ শামসি ৪ ওভারে ১৩ রান খরচায় তুলে নেয় ইভেন লুইস ও শিমরন হেটমেয়ারের মুল্যবান ২টি উইকেট।