নো ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ!

0
1746

একজন ক্রিকেটারের স্বপ্ন থাকে নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব করা। স্বপ্ন পূরনের এই ধাপের পর তার পরবর্তী লক্ষ্য থাকে নিজের পারফর্ম্যান্সের মাধ্যমে দলের জয়ে অবদান রাখা। প্রতিটা ক্রিকেট ম্যাচেই এমন একটা পারফরম্যান্স থাকে যা ছাপিয়ে যায় অন্য ২১ জন খেলোয়াড়কে। সবার থেকে আলাদা করে যে নিজেকে সেই ম্যাচে চেনায় তার স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে দেয়া হয় “ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ” এর পুরস্কার। কিন্তু ক্রিকেট বিশ্বে এমন অনেক নামকরা ক্রিকেটার রয়েছেন যারা দীর্ঘদিন ধরে অনেক ম্যাচ খেলার পর ও কখনো ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হননি! দলের জয়ে তাদের অবদান অস্বীকার করার মতো না যদিও। আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরবো এমনি ৫ জন বিখ্যাত ক্রিকেটারের পরিচয় যারা তাদের টেস্ট ক্যারিয়ারে কখনোই ম্যান অফ দ্যা ম্যাচের স্বীকৃতি লাভ করেন নি।

মঈন খান
৯০ এর দশকে পাকিস্তান দলের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ জয়ী সেই দলের অংশ ও ছিলেন। সাকলায়েন মুশতাকের আবিষ্কৃত বিখ্যাত “দুসরা” বলের নামকরনের কৃতিত্ব তাকে দেয়া হয়। যখন তিনি অবসর গ্রহন করেন ততদিনে খেলে ফেলেছেন ৬৯ টেস্ট। ৪ সেঞ্চুরি সহ মোট ২৭৪১ রান ও ১৪৮ টি ডিসমিসাল থাকলেও মঈন খান তার সুদীর্ঘ ১৪ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারে কখনো ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হন নি!

সৈয়দ কিরমানি
মহেন্দ্র সিং ধোনীর পর ভারতের সবচেয়ে নামকরা ও সফল উইকেটকিপার হিসেবে বিবেচনা করা হয় সৈয়দ কিরমানিকে। ১৯৮৩ এর বিশ্বকাপ জয় ও বিদেশে বিভিন্ন টেস্ট জয়ে লোয়ার অর্ডারে তার ব্যাটিং ও ক্ষীপ্র কিপিং এর অনেক অবদান ছিলো। ৮৮ টেস্টে ২ সেঞ্চুরি সহ ২৭৫৯ রান ও ১৯৮ টি ডিসমিসাল ছিলো তার। ১০ বছর ধরে এতগুলো টেস্ট খেলার পর ও তিনি কোনদিন ম্যান অফ দ্যা ম্যাচের পুরস্কার পান নি।

বব উইলিস
ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম গ্রেট ফাস্ট বোলার হিসেবে উচ্চারিত হয় বব উইলিসের নাম। ইংল্যান্ডের সর্বকালের সর্বোচ্চ টেস্ট উইকেট শিকারী বোলারের তালিকায় এখনো ৪ নম্বরে আছেন তিনি! ১৯৭১-১৯৮৪ পর্যন্ত তিনি খেলেছিলেন ৯০ টি টেস্ট। ৩২৫ উইকেট শিকার করেছিলেন সর্বমোট যেখানে ইনিংসে তার ৫ উইকেট ছিলো ১৬ বার! ১৯৮১ সালের এশেজে তার ৪৩ রানে ৮ উইকেটের স্পেলটিকে ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা বোলিং হিসেবে ধরা হয়। ১৯৭৮ সালে তাকে “উইজডেন বর্ষসেরা ক্রিকেটার” হিসেবে ঘোষনা করা হয়। এত সব দারুন রেকর্ড আর পারফরম্যান্সের পরও এটা খুবই অদ্ভুত যে তাকে কখনো ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হিসেবে বিবেচনা করা হয় নাই!

ইয়ান চ্যাপেল
বর্তমানে ধারাভাষ্যকার হিসেবে বেশ জনপ্রিয় ইয়ান চ্যাপেল হলেন চ্যাপেল ব্রাদার্সদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতম। অস্ট্রেলিয়ার এক সময়কার সফল ক্যাপ্টেন ও ছিলেন তিনি। ক্যারি পেকারের কুখ্যাত “World Series Cricket” এ অংশ নেয়ার কারনে তার ক্যারিয়ার অতটা লম্বা হয় নি। যদিও তার ক্যারিয়ারকে আরো বিকশিত না হওয়ার জন্য তিনি ডন ব্র‍্যাডম্যানকে দায়ী করেন যিনি তখন সিলেকশন কমিটিতে ছিলেন! তার খেলা ৭৫ টেস্টে তার রেকর্ড ছিলো ঈর্ষণীয়। ৪২.৪২ এভারেজ ও ১৪ টি সেঞ্চুরি নামের পাশে থাকলেও এই অসাধারন প্লেয়ারটি কখনোই ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হতে পারেন নি!

জোয়েল গার্নার
বর্তমানে টি২০ স্পেশালিষ্ট মিডিয়াম পেসারদের কারখানা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দেখলে এই প্রজন্মের যে কারোরই বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে যে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজই একসময় দারুন সব জেনুইন ফাস্ট বোলারদের তীর্থক্ষেত্র ছিলো। ক্রিকেট ইতিহাসে “৪ ফাস্ট বোলার” থিওরির উদ্ভাবক ও তারা। ৭০ দশকের শেষ থেকে ৮০ দশকের শুরু পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ তো বটেই ক্রিকেট ইতিহাসের এই পর্যন্ত সবচেয়ে ভীতিজাগানিয়া পেস Quartet এ ছিলো মাইকেল হোল্ডিং, ম্যালকম মার্শাল, এন্ডি রবার্টস ও জোয়েল গার্নার। মানা হয় তাদের সবারই গতি ছিলো ১৫০ কি.মি./ঘন্টা এর উপরে! গার্নার লম্বায় ছিলেন ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি। তিনি যখন দৌড়ে আসতেন ব্যাটসম্যানদের গলা শুকিয়ে যেত ভয়ে। ৫৮ টেস্টে অবিশ্বাস্য ২০.৯৭ এভারেজে তিনি শিকার করেছিলেন ২৫৯ উইকেট। কিন্তু তিনিও কখনো টেস্টে ম্যান অফ দ্যা ম্যাচের পুরস্কার পান নি। এই লিস্টের বাকি চারজন থেকে গার্নার একটা ক্ষেত্রে আলাদা। কখনো ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ না হলেও তিনি ২ টি সিরিজে ম্যান অফ দ্যা সিরিজ হয়েছিলেন!

লেখকঃ সাজ্জাদুল কাদের