যে আউটে দাঙ্গা বেঁধে খালি হয় ৬৫০০০ দর্শকভর্তি স্টেডিয়াম

0
1950

১৯৯৯ সালের এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ম্যাচ ভারত-পাকিস্তানের মধ্যেকার কলকাতা টেস্টটা নিঃসন্দেহে সবার মনে দাগ কেটে থাকবে দুইটা মানুষ এর জন্য। শচীন টেন্ডুলকার সেই টেস্টের ১ম ইনিংসে গোল্ডেন ডাকে আউট হয়েছিলেন। আর তাকে সেই দুর্দান্ত বোল্ডটি করেছিলো শোয়েব আখতার। পুরো ইডেন গার্ডেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো মূহুর্তে। এর আগের বলেই আরো একটি ইয়র্কারে রাহুল দ্রাবিড়কে বোল্ড করেছিলেন। মূলত এই দুই আউট দিয়েই শোয়েব আখতার বিশ্বকে নিজের আগমনী বার্তা জানিয়েছিলেন।

তবে এই টেস্ট আরো একটি কন্ট্রোভার্সিয়াল সিদ্ধান্তের জন্য পরিচিত যেটা হয়তো খুব বেশি মানুষের জানা নেই অথবা মনে নেই। ৪র্থ ইনিংসে জয়ের জন্য ভারতের টার্গেট ছিলো ২৭৯ রান। জবাবে ১৪৫ রানে ২ উইকেটে ব্যাট করছিলো ভারত৷ ক্রিজে তখন টেন্ডুলকার আর দ্রাবিড়। ওয়াসিম আকরামের বলে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে মেরেই শচীন ছুটলেন৷ ইডেন গার্ডেনের আউটফিল্ড যথেষ্ট বড় ছিলো তখন। সহজেই ৩ রানের জন্য ব্যাটসম্যানরা প্রান্ত বদল করলেন। সাবস্টিটিউট ফিল্ডার নাদিম খান যখন বাউন্ডারির একদম কাছ থেকে নন স্ট্রাইকে বল থ্রো করলেন সেটা গিয়ে সরাসরি স্ট্যাম্পে গিয়ে লাগলো। পাকিস্তানিরা আম্পায়ারের কাছে আউটের আবেদন জানালেন৷ কিন্তু শচীন তো ততক্ষণে আরামসে লাইন ক্রস করার কথা, তাহলে ঘটনা কি! টেলিভিশন রিপ্লে তে দেখা গেল বল স্ট্যাম্পে লাগার আগেই টেন্ডুলকার তার ব্যাট দাগের ভিতরে বসিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু তার সামনে বল ধরার জন্য দাঁড়ানো শোয়েব আখতারের সাথে ধাক্কা খেয়ে স্ট্যাম্পে লাগার সময় ব্যাট উপরে উঠে যায়। তৎকালীন নিয়ম অনুযায়ী থার্ড আম্পায়ার তাই তাকে রান আউট দেন, যেহেতু শোয়েবের এভাবে বাধা দেয়াটা ইচ্ছাকৃত ছিলো না। কখনো কোন আউটে নাখোশ না হওয়া টেন্ডুলকার ও কিছুটা হতবিহ্বল হয়ে যান এই সিদ্ধান্তে। মাঠ থেকে বের হয়ে ড্রেসিংরুমে না ফিরে তিনি সোজা চলে যান থার্ড আম্পায়ারের রুমে ঘটনা কি বুঝার জন্য৷

ততক্ষনে গ্যালারিতে দর্শকদের মধ্যে বিক্ষুব্ধতা বেড়ে উঠেছে তুঙ্গে। ওই ওভার শেষে শোয়েব আখতার বাউন্ডারি লাইনে ফিল্ডিং করতে গেলে তাকে উদ্দেশ্য করে বাজে ভাষায় গালি দেয়ার পাশাপাশি পানির বোতল সহ অন্যান্য জিনিস ছুড়ে মারা হয়। ম্যাচ চলার পরিবেশ না থাকায় আম্পায়াররা একটু আগেই টি-ব্রেক ঘোষনা করেন। ব্রেক চলাকালীন টেন্ডুলকার ও জগমোহন ডালমিয়া নিজেরা পুরা মাঠে ঘুরে স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শকদের শান্ত হতে বললে তাদের ক্ষোভ প্রশমিত হয়ে আসে। এরপর ওইদিনের খেলায় আর কোন বিঘ্ন ঘটেনি। ইন্ডিয়া ৪র্থ দিন শেষ করে যখন তাদের হাতে ছিলো ৪ উইকেট আর জয়ের জন্য ৬৫ রান।

৫ম দিনে তাদের দলের জয় দেখতে ভিড় করে প্রায় ৬৫০০০ দর্শক। সর্বশেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান ছিলো সৌরভ গাঙ্গুলি। কিন্তু দিনের খেলা শুরুর মাত্র নবম বলেই তিনিও আউট হয়ে গেলে ভারতের জয়ের আশা স্তিমিত হয়ে আসে৷ ওইদিকে নিজ দলের আসন্ন পরাজয়ের সম্ভাবনা দেখে ভারতীয় দর্শকদের মধ্যে আগের দিনের মনোভাব আবারো ফিরে আসা শুরু করে। জাভাগাল শ্রীনাথ আউট হলে ভারতের স্কোর দাঁড়ায় ২৩১/৯৷ ঠিক এরপরই দর্শকরা চরম বিশৃঙ্খলা শুরু করে। তারা গ্যালারিতে আনা প্ল্যাকার্ড আর বিভিন্ন কাগজে আগুন লাগিয়ে দেয়, মাঠে পাথর, বোতল, খাবার ফল নিক্ষেপ করা শুরু করে৷ এমন অবস্থায় মাঠে থাকা পুলিশ একে একে ৬৫০০০ দর্শককে মাঠ থেকে বের করে দেয়, যার কারনে প্রায় ৩ ঘন্টা খেলা স্থগিত থাকে। অবশেষে খেলা আবার শুরু হয়। এর ১০ বল পরই ভারতকে অলআউট করে পাকিস্তান ৪৬ রানের এক ঐতিহাসিক কিন্তু বিতর্কিত এক জয় পায়।

লেখকঃ সাজ্জাদুল কাদের