রাজার রাজদন্ডের অপেক্ষা

0
1160

এক বুক আশা ভরসা নিয়ে সন্তানেরা তাদের বাবা মায়ের কাছে যায় কিন্তু মাঠে ময়দানে যেনো উল্টো চিত্র যুগের পর যুগ ধারন করা স্বপ্ন গুলো নিয়ে বিশ্বসেরা জাদুকরেরা তাদের সন্তানের মতো ট্রফির কাছে যায়।

এইতো সেইদিন ফুটবল তার পূর্ণতা পেলো, ফুটবলের জাদুকরের হাতে উঠলো তার প্রাপ্য সম্মান। হ্যাঁ আমি যতটুকু না আর্জেন্টিনার ২৮ বছর পর ট্রফি পাওয়ার কথা বলছি তার চেয়ে বেশি বলছি লিওনেল মেসির কথা ফুটবলের জাদুকরের কথা তার হাত ধরেই আর্জেন্টিনার শিরোপা খরা কেটেছে তাই বাংলাদেশে মেসি ভক্তরা ও চাইছেন ক্রিকেট তার পূর্ণতা পাক।বিশ্বসেরা তার প্রাপ্য সম্মানটুকু পাক।

সাকিব আল হাসান দ্যা পোস্টার বয় অফ বাংলাদেশ, তিনি নিজেও মেসির চরম ভক্ত মেসি বলতে তিনি অজ্ঞান তার ফুটবলের ভালোবাসা মেসি। মেসির হাতে ট্রফি দেখার পর হয়তো তারও ইচ্ছে হচ্ছে আন্তর্জাতিক ট্রফি ছুয়ে দেখার।

কেন উইলিয়ামসনেরা টেস্ট চ্যাম্পিয়ানশিপ জিতে ট্রফি ছুয়ে নিয়েছেন সেই লর্ডসের ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনাল হারের যেই দুঃস্বপ্ন ছিলো তা মুছে দিয়ে নতুন ইতিহাস গড়েছেন টেস্টের নতুন রাজা কেন উইলিয়ামসন।

পরপর চারবছর ফাইনালের সেই ব্যর্থতা যেনো এই এক ফাইনালে পুষিয়ে দিয়েছেন কোপা আমেরিকার নতুন রাজা লিওনেল মেসি। এইবার কী তবে নবাবের পালা? ক্রিয়া প্রেমিরা যেনো মুখিয়ে আছে রাজার হাতে রাজদণ্ড দেখবে বলে একের পর এক সফলতা পেয়ে যাচ্ছেন রাজা কেন বাকি থাকবে রাজদণ্ড ফেসবুক টুইটার ইনস্টাগ্রাম সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি সুর একটি গান এইবার ক্রিকেটের পূর্ণতার পালা “রাজার হাতে রাজদণ্ড “দেখার পালা।

কেনো বলছেন বক্তরা এই রাজদণ্ড তাদের লাগবেই লাগবে তার অন্যতম কারণ এই নিখুঁত পরিসংখ্যান –

জুলাই ২০২১ – ক্যারিয়ারের প্রথম ইন্টারন্যাশনাল ট্রফি অর্জন লিওনেল মেসির।

জুলাই২০২১ – আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ‘রান-উইকেট’ উভয়ক্ষেত্র মিলিয়ে সর্বোচ্চ অবদান রাখা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান।

এতো মিল তো এতো অর্জন তবে কেন বাকি থাকবে সন্তান তুল্য সেই ট্রফি।

তবে এবার একটা ট্রফি সাকিবেরও চাই

লিভারপুল ৩০ বছর পর লিগ টাইটেল জিতল। আর্জেন্টিনা ঘুচাল ২৮ বছরের আক্ষেপ। ফাইনালের দুই দুঃখী রাজকুমার কেন উইলিয়ামসন আর মেসিও হাসল ফাইনালে। শুধু কী হাসি!  বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসই করলেন। অবশ্য ওদের মানাও। ওমন সব ক্ষতের পরে এমন প্রাপ্তিতে কে না ভেসে যাবে বলুন?

প্রকৃতি ঋণী থাকেনা শুনেছি সব ফিরিয়ে দেয়। কখনো সমান কখনো দ্বিগুণ। আমাদেরও এক দুঃখী রাজকুমার আছে। রাজকুমার বললে ভুলই হবে। রাজা আমাদের ক্রিকেটে ওর মত অবস্থানে কেউ নেই। ওর দুঃখটা অবশ্য মেসি বা উইলিয়ামসনের থেকে কম হতে পারে! কী অদ্ভুত। দুঃখ, তারও কমবেশি মাপছি। কেঁদেছিল, ২০১২ এশিয়া কাপটা হেরে। এক্কেবারে শিশুর মতো।

এবার সাকিবেরও একটা ট্রফি চাই। অনেকেই চাচ্ছে। সেই চাওয়া তো অনেকদিনেরই। তবে মেসি, উইলিয়ামসনদের হাতে ট্রফি দেখে সাকিবদের জন্যও সেই চাওয়া বেড়েছে হুরহুর করে এবং বাড়েই চলছে।

তবে বাস্তবতা ভিন্ন  নিরস, নিষ্ঠুর বাস্তবতা এসে জানিয়ে দেয় চাওয়া-পাওয়ার মাঝে পার্থক্য অনেক।  আমাদের মতো এক ক্রিকেটীয় জাতির কাছে তা বহু ক্রোশ দূরে।

রান-উইকেট আছে অনেক। রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়েছেন একাই। জিতিয়েছেনও একা অনেক ম্যাচ। দর্শক, ভক্তরা আবেগের ভেলায় ভেসে ট্রফি চাইতে পারে। তবে সাকিবের জানা আছে বোধকরি এটা টেনিস না যে একা খেলেই গ্ল্যান্ড স্ল্যামটা বাগানো যাবে। হলে তো গেল বিশ্বকাপ শেষেই সাকিব হয়তো অল ইংল্যান্ড ক্লাবের সেন্টার উইকেটে নিজেই একটা ট্রফি উঁচিয়ে ধরতেন!

খেলতে হবে একটা ‘দল’ হয়ে, তবেই জেতা যাবে। পুরো ট্রফিটাই জেতা যাবে। যেটা শুধু উইলিয়ামসন, মেসি একা নন করেছেন তার সতীর্থ্যরা মিলেই। ওমন একটা ‘দল’ যে কবে হবে আমাদের ক্রিকেট দল সেটাই প্রশ্ন।

সৌরভ ওমন বড় ট্রফি জেতেনি, বিশ্বকাপ ভাগ্যে নেই লারা-ক্যালিস-দ্রাবিড়দের। সাকিব তোমার ভাগ্যটাও না হয় ওমন হলো। বাস্তবতা জানি সাথে জানি তুমি একটা পথ দেখি দিয়েছ আমাদের। একটা শুরু হলো। অনেকেই হাঁটবেন সেই জয়ের পথে।

অনির্বাণ মেসি নিয়ে লিখেছিলেন, ‘বিশ্বকাপ পাও বা না পাও, মন যখনই খারাপ হবে, জানবে, আমার মতো অসংখ্য মানুষ তাদের অনেকটা করে বিশ্ব তোমার কাছে গচ্ছিত রেখেছে। সেটা জুড়ালে বিরাট আকার হয়! এই পৃথিবীটার চেয়েও বড়!’

সাকিব, তোমার জন্য আমাদের কেউ হয়তো এমন লিখবে না, কিংবা লিখবে। তোমাকে অনির্বাণের মতো ওমন একটা পৃথিবী না দিতে পারি। তবে মনে রেখো আমরাও অনেক না পাওয়া পেয়েছি তোমার পাওয়াতেই। একটা গোটা প্রজন্ম শুধু তোমাকে দেখেই ক্রিকেটের প্রেমে পড়েছে। একবারের জন্য ভেবেছে আমরাও জিততে পারি। তোমার কাছেই গচ্ছিত রেখেছে অনেকটা আনন্দ।

নাই বা জিতলে একটা বড় ট্রফি। সবার জিততে হয় বুঝি? ট্রফি না জিতলেও তুমি বহুকাল আগেই আমাদের কাছে জিতে বসে আছ। তবে মন মানে না। বাস্তবতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জেতা যায় না একটা ট্রফি? তোমার কাছেই আবদার। তুমিই তো বলেছিলে, জেতা সম্ভব।

শিশুর মতো আবদার কোটি কোটি ক্রিকেট ভক্তের, “জেতা সম্ভব” তার একটা কথা যেনো এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য নতুন স্বপ্ন দেখার সময়।

স্বপ্ন পূরণের দিন কি তবে এসে গেছে নবাবের হাত ধরে আসবে কী একটা ট্রফি?