পাহাড়সম দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ

0
1256

হারারেতে বুধবার দলীয় ২৭০ রানে পরপর দুই বলে লিটন দাস ও মেহেদী মিরাজ আউট হয়ে যাওয়ার পর, ৮ উইকেট হারিয়ে বসা বাংলাদেশের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। মনে হচ্ছিলো ৩০০ রানের আগেই অল আউট হবে। ডুবে যাচ্ছিলো টাইগারদের তরী। আমরা প্রায়ই দেখি তীরে এসে তরী ডুবে যায় বাংলাদেশ ক্রিকেটের। কিন্তু এইবার চিত্র ছিলো ভিন্ন তীরে এসেও দুই হাত দিয়ে দুই দিক থেকে টেনে তুললেন মাহমুদউল্লাহ তবে সম্পূর্ণ কৃতজ্ঞতা তাকে দিলেও দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগতে হবে বাংলাদেশকে। কারণ পেসার তাসকিন আহমেদ দুর্দান্তভাবে তালে তাল মিলিয়েছেন রিয়াদের সাথে দুইজনের নবম উইকেটের এই জুটি রেকর্ড গড়লো বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য।

গতকাল তামিম সাকিবের পর তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে নিজের ৫০তম টেস্টে অর্ধশতক পেয়েছিলেন রিয়াদ। তবে সেখানেই থেমে থাকেনি টাইগার এই অলরাউন্ডার ১৭ মাস পর টেস্টে দলে জায়গা ফিরে পেয়ে নিজের প্রত্যাবর্তন রাঙিয়ে এই ফরমেটে আজ নিজের ৫ম সেঞ্চুরি তুলে নেন এবং শুধু সেঞ্চুরি নয় ডাবল সেঞ্চুরি পথে এগিয়ে যান তিনি তবে শেষ পর্যন্ত ২৭৮ বল মোকাবিলায় ১৫০* রানে অপরাজিত থাকেন। তীরে এসে বারবার ডুবে যাওয়া এই তরীর যখন নিজে কান্ডারি হন খুব যেন নিরবে বহুবার বাংলাদেশ কে উদ্ধার করেছে। তাই বাংলার ক্রিকেটে তাকে সাইলেন্ট কিলার হিসেবে আখ্যা পেয়়েছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাইলেন্ট বাঘ তার মাহমুদউল্লাহ নামের পাশাপাশি সাইলেন্ট কিলার নামটা জনপ্রিয় তার এই অবদান গুলোর জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসের পাতায় পাতায় না থাকলেও ভক্তদের মনে আজীবন থেকে যাবেন এই সাইলেন্ট কিলার।

যেখানে বিশ্ব ক্রিকেটে মাহমুদউল্লাহর প্রশংসায় পঞ্চমূখ সেখানে ভুলে গেলে চলবে না দ্যা সিপ্ড স্টার তাসকিন আহমেদকে স্বীকৃত ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন। তার লক্ষ্য ছিলো যতটুকু পারেন রিয়াদের সাথে তাল মিলিয়ে খেলবেন কিন্তু মিল্টন সুম্ভার বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান ৭৫ রানে।

বাংলাদেশ ক্রিকেটে এমন মধুর দিনেও যেনো আক্ষেপ রয়েই যায়। দলকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে আসতে হবে তখন একা ক্রিজে মাহমুদউল্লাহ তার সংঙ্গ দিতে নামলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান তাসকিন মূলত তিনি বোলার, তাই দায়িত্বটা ছিলো মাহমুদউল্লাহর উপর তবে এই জুটি যে বিশ্ব রেকর্ডের দিকে এগিয়ে যাবে কে জানতো, নবম উইকেট জুটিতে ২৭৬ বল মোকাবেলায় ১৯১ রানের অবিশ্বাস্য পার্টনারশিপ গড়েন রিয়াদ ও তাসকিন। আক্ষেপ থেকে যায় চার রানের, মাত্র চার রানের জন্য ছোয়া হয়নি টেস্ট ক্রিকেটে নবম উইকেটে সর্বোচ্চ পার্টনারশিপের বিশ্বরেকর্ড। ফলে নবম উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পার্টনারশিপের বিশ্বরেকর্ড জুড়ে থাকলো মাহমুদউল্লাহ এবং তাসকিনের রান।

জোহানেসবার্গে ১৯৯৮ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে নবম উইকেটের জুটিতে ১৯৫ রানের পার্টনারশিপ গড়েছিলেন স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার মার্ক বাউচার এবং প্যাট সিমকক্স।যা টেস্ট ফরম্যাটে নবম উইকেটের সর্বোচ্চ পার্টনারশিপের বিশ্বরেকর্ড।

এর আগেও অবশ্য ১১ রানের একটি আক্ষেপ ছিলো নবম উইকেটে, ২০১২ সালে খুলনায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আবুল হাসানকে নিয়ে ১৮৪ রানের জুটি গড়েছিলেন রিয়াদ যা এই উইকেটে এখন চতুর্থ সর্বোচ্চ।

তাসকিনের আলাদা করে আরেকবার প্রশংসা করাই যায় কারণ বাংলাদেশ ক্রিকেটে স্লেজিং টা সেভাবে দেখা যায় না যদিও এটা ক্রিকেটার একটা অংশ তবুও বাংলাদেশী ক্রিকেটাররা স্লেজিং করতে পছন্দ করেননা। দু’ একজন ছাড়া কেউই এমন স্লেজিং করেনি তবে তা আজকে দেখা গেছে তাসকিনের কল্যাণে। ব্লেসিং মুজরাবানির ইতিমধ্যে বাংলাদেশের টপ অর্ডারকে লন্ড ভন্ড করে দিয়েছিলেন। তার সাথেই প্রথম সেশনে কথার লড়াইয়ে মেতে উঠেন তাসকিন আহমেদ। তবে শুধু মুখেই টেক্কা দিয়েছেন তা কিন্তু নয় মুখের মতো ব্যাটিংয়েও আক্রমণাত্নক ছিলেন তাসকিন রিয়াদ জুটি টেস্ট ক্রিকেটের নাম উঠলেই বাঙালি মনে রাখবে নবম উইকেটের এই জুটির কথা।