পেশাদার বিসিবির অপেশাদারিত্ব

0
1367

একজন খেলোয়াড়ের পেছনে ক্রিকেট বোর্ড কতটা সময় ব্যয় ও অর্থ বিনিয়োগ করে এর একটা হিসাব রাখা উচিত। যখন একজন খেলোয়ার ক্রিকেটার হিসেবে পূর্ণতা পায় তখনই তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী হয় আমাদের দেশের ক্রিকেট বোর্ড। তাহলে এতদিন একজন ক্রিকেটারের পিছনে যে সময় ও অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে সেটির আসলে যৌক্তিকতা কতটুকু। নতুন খেলোয়াড়দের পিছনে বিনিয়োগ অবশ্যই করতে হবে তা না হলে ভবিষ্যতের জন্য ভালো খেলোয়ার কোথা থেকে আসবে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে যে খেলোয়াড় পরিপক্ক হয়ে উঠল তাকে ছুঁড়ে ফেলা এটা কোনোভাবেই যৌক্তিকবলা যাবে না।

আমাদের ক্রিকেট বোর্ডে বর্তমানে এটা একটা কমন প্রাকটিস হয়ে গেছে, যে একজন খেলোয়াড় যখনই একটু ম্যাচুরিটি আসে তখনই ফিটনেস এবং দুই এক ম্যাচের খারাপ পারফরম্যান্সের অজুহাতে দল থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়।

দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যতম ব্যাটিং পারফর্মার তুষার ইমরান, বেশ কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে রান করে আসছেন তিনি। কিন্তু কখনোই নির্বাচকদের বিবেচনায় আসেননি। বিডি ক্রিকেট টাইমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। খেলোয়াড় হিসেবে অন্তত একটা সুযোগ পাওয়ার যোগ্য। দেশের ক্রিকেটারদের সাথে এই জাতীয় অনুশীলন আমাদের ক্রিকেট বোর্ডের মধ্যে হরহামেশা দেখা যায়। অভিজ্ঞতার যদি গুরুত্ব না থাকে তাহলে দীর্ঘদিন ধরে অভিজ্ঞ খেলোয়াড় তৈরি করার কোনো মানে নেই।

প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ঠিক একই পরিস্থিতির পার করে এসেছেন। ১৯৯৯ সালে প্রথম বিশ্বকাপে স্কোয়াড যখন নির্বাচন করা হয় নান্নুকে তৎকালীন নির্বাচকরা স্কোয়াডে রাখেন নি। কিন্তু তখনকার পিপলস চয়েস’ ছিলেন মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। যেদিন স্কোয়াড ঘোষণা করা হয় এ দিন প্রস্তুতি ম্যাচে অর্ধশতরান করার পরেও মিনহাজুল আবেদীন নান্নু জায়গা হয়নি। এই নিয়ে দেশের ক্রিকেট সমর্থকরা সারা দেশে সোচ্চার হয়ে ওঠেন মানববন্ধন করা হয়, তার নিজের এলাকায় চট্টগ্রামে মিছিল হয়। অবশেষে সমর্থকদের দাবিতে মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ওয়ার্ল্ড কাপ স্কোয়াডে সুযোগ পান।

সমর্থকদের দাবিতে অবশেষে দলে জায়গা হয় তার কিন্তু প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি জায়গা পাননি। তৃতীয় ম্যাচে স্কটল্যান্ড এর বিপক্ষে তখন তিনি খেলতে নামেন ২৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে তখন ম্যাচ বাঁচানো অপরাজিত ৬২ রানের এক ইনিংস খেলেন তিনি। ঠিক পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অর্ধশতক করেছিলেন। তিনি হয়তো নিজের এই সময়টা হয়তো ভুলে গিয়েছেন যে কোন ক্রিকেটারের একটা সুযোগের অবশ্যই প্রয়োজন নিজেকে প্রমাণ করার জন্য।

মাহমুদুল্লাহ যে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা একজন ক্রিকেটার এ নিয়ে কোনো দ্বিধা নেই। কিন্তু ১৭ মাস পর টেস্ট ক্রিকেটে ডাক পেয়েছেন সেটি ও তামিম ইকবালের ইনজুরির কারণে। এই টেষ্টে ফিরেই প্রথম ইনিংসে ১৫০ রানের এক অসাধারণ ইনিংস খেলেছেন। কিন্তু তার মনের কোণে একটা অভিমান যে ছিল সেটা সকল ক্রিকেটভক্ত পাশাপাশি ক্রিকেট সংক্রান্ত সকল মানুষ অনুধাবন করতে পেরেছেন।

এতদিন অবহেলিত থাকার পরে টেস্টের সুযোগ টাও খুব স্বাভাবিক পন্থায় তার কাছে আসেনি। একজন খেলোয়াড়ের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে তাকে দলে যোগ দিতে হয়েছে এটাই হয়তো অনেক বড়  অভিমানের জায়গা তার কাছে। এই অভিমানের জায়গা থেকেই হয়তো ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।

একজন ক্রিকেটার হবার পাশাপাশি মাহমুদুল্লাহ একজন মানুষ সেটাও আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে যে কোন মানুষের মত তার আবেগ অনুযোগ থাকতেই পারে। কিন্তু তিনি একবার ও কি চিন্তা করেছেন কি যে বাংলাদেশ ক্রিকেটের তার তার প্রয়োজন কতটুকু? টেস্ট ক্রিকেটে তার আরো অনেক কিছু দেবার আছে অন্তত বাংলাদেশ ক্রিকেটের কথা চিন্তা করে কিংবা বাংলাদেশ ক্রিকেট ফ্যানদের কথা চিন্তা করে তার টেস্ট ক্যারিয়ার আরো দীর্ঘায়িত করার প্রয়োজন ছিল এটা সকল ক্রিকেটভক্তরা মনে করেন।

ফিরে আসার কথা বলা এখানে নিতান্তই অপ্রয়োজনীয়। এভাবে প্রতিটি সিনিয়র ক্রিকেটার অবহেলিত ও অবাঞ্চিত হচ্ছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটে। বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার কথাই যদি বলা হয় তাকেও টি-টুয়েন্টি থেকে এভাবে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। অবসরের একটি সুযোগ তাকে দেওয়া হয়নি কিংবা তার সাথে কোনো ধরনের আলোচনা করা হয়নি যে তিনি কিভাবে অবসর নিতে চান কিংবা ক্রিকেটকে বিদায় নিতে চান। একই ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশের অন্যতম ক্রিকেটার আমিনুল ইসলাম বুলবুল তিনি কখনই বাংলাদেশ ক্রিকেট থেকে নিজের অবসর কথা ঘোষণা করেন নি এটাই একটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রতি তার একটা প্রতিবাদ ছিল।

এজাতীয় ঘটনার পুনরাবৃত্তি বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য কতটা সুখকর কিংবা ভালো বয়ে আনবে সেটা বলা খুবই দুষ্কর! এরকম পরিস্থিতি থেকে অবশ্যই ক্রিকেটকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং সুস্থ একটি ক্রিকেট ধারা বয়ে আনতে হবে। যে কোন ক্রিকেটারের বাংলাদেশ দলের জন্য খেলে এবং সকলেই ডিজার্ভ করে ভালো একটি ইতি। আশা করি বিসিবির শুভবুদ্ধির উদয় হবে।